শিরোনাম
ইনানী নয়, পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্টমার্টিন যাবে নুনিয়া ছড়া থেকে ট্যুরিজম ডেস্টিনেশন ডেভেলপমেন্ট খসড়া পরিকল্পনার উপর কর্মশালা অনুষ্ঠিত রামুতে ‘জেন্ডার সচেতনতা ও সহিংসতা প্রতিরোধ বিষয়ক প্রশিক্ষণে বক্তারা: নির্যাতন-বৈষম্য রোধে প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও সামাজিক সচেতনতা ক্যারিয়ার কার্নিভাল ২০২৫: কর্মসংস্থানের পথে কক্সবাজারের তরুণদের নতুন যাত্রা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের বাস সার্ভিস সুবিধা দিবে রামু স‌মি‌তি সানড্রি ক্রীড়া সংসদের ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি গঠন সোনাদিয়া দ্বীপ — কক্সবাজারের খুব কাছে, অথচ অন্য এক পৃথিবী “রোগ প্রতিরোধ, সৌন্দর্য আর সুস্থতায় মধুর জুড়ি নেই” এনসিপি চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে এ এস এম সুজা উদ্দিন টুয়াকের বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০২৫ উদযাপন

ইনানী নয়, পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্টমার্টিন যাবে নুনিয়া ছড়া থেকে

সিবিএল ডেস্ক: কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে যাবে পর্যটকবাহী জাহাজ। আইনগত বিধি নিষেধ থাকায় উখিয়ার ইনানী থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ নেই।
সোমবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে নীতিগত সম্মতি প্রদান বিষয়ে প্রেরিত চিঠিতে এমন কথা বলা হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কিছু লোকজন প্রচারণা চালিয়ে আসছিল, উখিয়ার ইনানী থেকে সেন্টমার্টিনে যাবে পর্যটকবাহী জাহাজ। এতে পর্যটকরা নানাভাবে বিভ্রান্তিতে পড়ে। এমন আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সোমবার সরকারি এ সিদ্ধান্তটি এসেছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়েছে। ইনানী জেটি যেহেতু ইসিএ এলাকায় অবস্থিত। তাই এটা নৌরুট হিসেবে ব্যবহ্নত হলে এখানে বিভিন্ন ক্রুজশীপ, লঞ্চ, ট্রলার ইত্যাদির গতিবিধি বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে ইনানী জেটি সংলগ্ন এলাকাসহ তার চতুর্দিকে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম গড়ে উঠে জনসমাগম বৃদ্ধি করবে, যা ঐ এলাকার সংকটাপন্ন জীববৈচিত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। এমতাবস্থায় ইনানী মৌজাটি ইসিএভুক্ত হওয়ায় ইনানী-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচলে আইনগত এবং বিধিগতভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বিধায় এই রুটে নৌযান চলাচলের সুযোগ নেই। বিকল্প হিসেবে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া-সেন্টমার্টিন বিদ্যমান জেটি ব্যবহারক্রমে নৌযান চলাচলে নির্দেশক্রমে নীতিগত সম্মতি প্রদান করা হয়েছে।
চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আগের নিয়মেই কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে যাবে পর্যটকবাহী জাহাজ।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকার গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ–সংক্রান্ত ১২টি নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি দিতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত্রিযাপন করা যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না।
সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়–বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এ ছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক, যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নাজুক পরিবেশ ও অনন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকবে এবং দ্বীপটি দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে উঠবে বলে আশা করছে সরকার।
সূত্র জানায়, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ও চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন- এ তিন নৌরুটে দিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে বিলাসবহুল ১২টি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করেছিল। এর মধ্যেই গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর (এএ) তুমুল যুদ্ধ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি নাফ নদী দিয়ে সেন্টমার্টিনে যাতায়াতের সময় একাধিকবার বাংলাদেশি সার্ভিস ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে গুলিবর্ষণের ঘটনার কারণে নাফ নদী অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। ফলে ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।




Developed by e2soft Technology