
খালেদ শহীদ: পার্বত্য রাঙামাটির প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে রামু প্রেসক্লাবের আনন্দ ভ্রমন। ‘খবরে আমরা নির্ভীক, ভ্রমনে আমরা প্রাণবন্ত’ শ্লোগানে গত ৬ থেকে ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত আনন্দ ভ্রমনে কক্সবাজার জেলা শহরে ও রামুতে কর্মরত রামু উপজেলার সাংবাদিক সহ রামু প্রেসক্লাবের ৪০ জন সাংবাদিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।
বিশাল জলরাশিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পার্বত্য রাঙামাটির প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য। লেকের অথৈ জলরাশিতে পাহাড় ও প্রকৃতির অকৃত্রিম সবুজের সমারোহ। সংবাদের পেছনে ছুটে চলা সাংবাদিকরা প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে পড়েন। লেক ঘিরেই গড়ে উঠেছে রাঙ্গামাটি জেলার পর্যটন শিল্প। বৃহষ্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধায় রামু রেলস্টেশন থেকে শুরু হয় আনন্দ ভ্রমন। রেলযোগে ভ্রমন পিপাসী সাংবাদিকরা রাতে চট্টগ্রাম এবং পরদিন ভোররাতে রাঙামাটি শহরে পৌঁছান।
জানা গেছে, রাঙামাটি জেলায় সৃষ্ট কৃত্রিম এই হ্রদ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড়। ১১ হাজার বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হ্রদে মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট-বড় পাহাড়, আঁকাবাঁকা ও উঁচুনিচু পাহাড়ি সড়ক, ঝরনা আর পানির সঙ্গে সবুজের অপর সৌন্দর্য। পাহাড়ের উদ্ভিদ ও প্রাণিসম্ভার, লেকের অথৈ জলে বহু প্রজাতির মাছ ও অফুরন্ত জীববৈচিত্র্য। লেকের চারপাশে ছোট ছোট দ্বীপে গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন স্পট। আদিবাসী গ্রাম ও বাজার। ভ্রমনে আগ্রহী পর্যটকদের প্রতি মুহূর্তেে মুগ্ধ করে।
১৯৫৬ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে রাঙ্গামাটি জেলার ৫৪ হাজার একর কৃষি জমি ডুবে যায়। যা ওই এলাকার মোট কৃষি জমির ৪০ শতাংশ। সরকারি সংরক্ষিত বনের ২৯ বর্গমাইল এলাকা ও অশ্রেণিভুক্ত ২৩৪ বর্গমাইল বনাঞ্চলও ডুবে যায়। এতে প্রায় ১৮ হাজার পরিবারের মোট ১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। সেই সঙ্গে পুরোনো চাকমা রাজবাড়ি কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের সময় তলিয়ে যায় এই লেকেই।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) দুপুর থেকে বিকাল টুরিস্ট জিপগাড়ি যোগে রামু প্রেসক্লাব সাংবাদিকরা পাহাড়ি আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু সড়কে বিভিন্ন পর্যটন স্থান রাঙামাটি কাপ্তাই বাঁধ, লাভ পয়েন্ট, সওজ লেক, আসামবস্তি সেতু, নৌবাহিনী পার্ক পরির্দশন করেন। ওইদিন সন্ধায় রাঙামাটি প্রেস ক্লাবে পৌঁছলে রামু প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দকে স্বাগত জানান রাঙামাটি প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দ। পরে রাঙামাটি প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা, সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পরদিন শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আনন্দ ভ্রমনের তৃতীয় দিন হয়ে উঠে আরও উপভোগ্য ও আনন্দময়। ইঞ্জিন চালিত ট্যুরিস্ট বোটে সকাল ৮ টা থেকে শুরু হয়ে যাত্রা। ২০০০ ফুট উঁচু শুভলং পাহাড়ের ঝরনা। শুভলং ঝরনা দেখতে যাওয়ার পথের সৌন্দর্য সবাইকে আবেগময় করে তোলে।। মায়াবী দ্বীপ, পাহাড়ের ওপর সাজানো ছোট্ট ছিমছাম আদিবাসী গ্রাম, আদিবাসী বাজার, কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্মিত ৩৩৫ ফুট লম্বা নান্দনিক ঝুলন্ত সেতু। কাপ্তাই লেকের বিচ্ছিন্ন দুই পাড়ের পাহাড়ের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে দিয়েছে রঙিন এই ঝুলন্ত সেতু। এই সেতুতে দাঁড়িয়ে কাপ্তাই লেকের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করা যায়। ব্রিজের একপাশে পাহাড়ের ওপর শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে দোলনা, স্লিপার। নতুন চাকমা রাজবাড়ি ও বৌদ্ধ মন্দির, পলওয়েল পার্ক, পরির্দশন করেন আনন্দ ভ্রমনে অংশ নেয়া সাংবাদিকরা। ওইদিন দুপুরে লেকের ছোট্ট দ্বীপে চাং পাং রেস্টুরেন্টের বৈচিত্র্যময় খাবারে মধ্যাহ্নভোজ সম্পন্ন করা হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাঙামাটি প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন রামু প্রেসক্লাব সদস্যরা। পরে রাঙামাটি প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা। রামু প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম আবদুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সোয়েব সাঈদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন, রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি আনোয়ার আল হক, সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াছ, সাবেক সভাপতি সুনীল কান্তি দে, সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাফর, রামু প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি খালেদ শহীদ ও নুরুল ইসলাম সেলিম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এইচবি পান্থ, মোহনা টিভির কক্সবাজার প্রতিনিধি আমানুল হক বাবুল, চ্যানেল ২৪ এর কক্সবাজার প্রতিনিধি আজিম নিহাদ, এটিএন নিউজ এর কক্সবাজার প্রতিনিধি অর্পণ বড়ুয়া, বিজয় টিভির কক্সবাজার প্রতিনিধি শাহ আলম, বৈশাখী টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধি খোরশেদ আলম হেলালী। সাংবাদিকতার মান উন্নয়নে আয়োজিত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষক ছিলেন- রামু প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি খালেদ শহীদ, চ্যানেল ২৪ এর কক্সবাজার প্রতিনিধি আজিম নিহাদ ও এটিএন নিউজ এর কক্সবাজার প্রতিনিধি অর্পণ বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে আনন্দ ভ্রমণ আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করায় এনএসআই প্রতিনিধি আবু হানিফ মোহাম্মদ রুবাইদকে রামু প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন- বেতারের তালিকাভূক্ত শিল্পী ইসকান্দর মির্জা, অর্পন বড়ুয়া, আবুল কাশেম সাগর ও সোয়েব সাঈদ।
এসব আনন্দ আয়োজনে আরও অংশ নেন রামু প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও উপদেষ্টা দর্পন বড়ুয়া, সহ সভাপতি খালেদ হোসেন টাপু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মাহমুদ ভূট্টো, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান তারেক মুকিম, সহ দপ্তর সম্পাদক শওকত ইসলাম, সহ প্রচার সম্পাদক আবুল কাশেম সাগর, কার্যকরী সদস্য মুহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিক, সদস্য কামাল হোসেন, হুমায়ন কবির, প্রসূন বড়ুয়া, হামিদুল হক, নুরুল হক সিকদার, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও জয়নাল আবেদীন, রামুর কর্মরত সাংবাদিক জাফর আলম জুয়েল, আবদুল মালেক সিকদার, মো. কায়সার, জাবেদুল আনোয়ার, মোহাম্মদ মোবারক, নুরুল আমিন, মো. ইলিয়াছ, রিজন বড়ুয়া, উচ্ছ্বাস বড়ুয়া ও মামুনুর রশিদ।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।