নিজস্ব প্রতিবেদক: আনন্দ-আড্ডা, সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি ও স্মৃতিকথনে মুখরিত হয়ে উঠে কক্সবাজারের প্রাচীন পরিবার জমিদার ছৈয়দ আহমদ প্রজন্ম। সম্মাননা প্রদান ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনে আত্মীয়-স্বজনের আবেগ-উচ্ছাসে অনুষ্ঠানের প্রাণ স্পন্দন আরো বাড়িয়ে দেয়। মিলনমেলা ও পারিবারিক সম্মিলন প্রেরণা যোগাবে স্বজনের আন্তরিকতা রক্ত-আত্মার বন্ধন, সমৃদ্ধ করবে পারিবারিক যোগাযোগ ও সামাজিকতা। প্রত্যাশা আগামী বছর আবারো প্রাণের বন্ধনে মহামিলনের আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে উঠবে কক্সবাজারের জমিদার ছৈয়দ আহমদ প্রজন্ম পরিবার।
রক্ত আত্মার বন্ধনে আমরা, জমিদার ছৈয়দ আহমদ প্রজন্ম। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আমরা ছিলাম, আছি, থাকবো। এমন অঙ্গীকারে শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) কক্সবাজার সাগরপাড়ের সুগন্ধা বিচের কোরাল লাউঞ্জ রেস্টুরেন্টে দিনব্যাপী আনন্দ-উচ্ছাসে মেতে উঠে, কক্সবাজারের প্রাচীন পরিবার জমিদার ছৈয়দ আহমদের চার প্রজন্ম’র সদস্যরা। সকাল ১১টায় জমিদার ছৈয়দ আহমদ ও প্রয়াত স্বজনদের স্মরণে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া মাহফিল ও মোনাজাত পরিচালনা করেন, জমিদার ছৈয়দ আহমদের নাতজামাই কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস জামে মসজিদের খতিব মাওলানা ওহিদুল আলম।
জমিদার ছৈয়দ আহমদের সপ্তম সন্তান আয়েশা বেগম সভাপ্রধান এবং নবম সন্তান বান্দরবান বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও ট্রেজারার, চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান (অব:) ড. নুরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন। মিলনমেলা ও পারিবারিক সম্মিলন ২০২৪ আয়োজন করে, কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার জমিদার ছৈয়দ আহমদ প্রজন্ম পরিষদ। অনুষ্ঠানে জমিদার ছৈয়দ আহমদের প্রথম সন্তান মনির আহমদ (মরণোত্তর), দ্বিতীয় সন্তান আলমাস বেগম (মরণোত্তর), তৃতীয় সন্তান শামসুল হুদা (মরণোত্তর), চতুর্থ সন্তান ফাতেমা খাতুন (মরণোত্তর), পঞ্চম সন্তান কুলসুম খাতুন (মরণোত্তর), ষষ্ঠ সন্তান মাহমুদা খাতুন (মরণোত্তর), সপ্তম সন্তান আয়েশা বেগম, অষ্টম সন্তান মমতাজ বেগম (মরণোত্তর), নবম সন্তান ড. নুরুল ইসলামকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করে জমিদার সৈয়দ আহমদ প্রজন্ম পরিষদ।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ড. নুরুল ইসলাম বলেন, আমি আনন্দিত, আমি উচ্ছ্বসিত। আমার পিতা জমিদার ছৈয়দ আহমদের কয়েক প্রজন্ম একত্রিত হয়েছে মহামিলনে। ঠিক কত বছর পরে, সবাইকে কাছে পেলাম মনেই নাই। তবু আনন্দ ও হৃদ্ধতায় মিলন হতে পেরে শুকরিয়া মহান আল্লাহ’র কাছে। পারিবারিক মিলনমেলায় এসে অনুভব করেছি আপনজনরা কত কাছের, কত আপনার। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কাছাকাছি থাকার প্রত্যয়ে পরিকল্পিত কর্ম নিয়ে কাজ করতে হবে। তাদের চার হাত চারশত হাতে পরিণত হয়েছে। যাদের ত্যাগের ফসল, আজ আমরা ভোগ করছি। তাদেরকে যথাযথ সম্মানে ও মর্যাদায় স্মরণে রাখতে হবে। আমাদের সৌহার্দ্যতা ও আমাদের কর্ম জমিদার ছৈয়দ আহমদ এবং তার প্রয়াত স্বজনরা ভালো থাকবেন। আগামীতেও এ রকম আয়োজন চলমান থাকুক। এতে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক আরো সমৃদ্ধ হবে। আন্তরিকতার চর্চা থাকলে পারিবারিক মিলনমেলা একটি বংশের আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে উঠে।
মিলনমেলা ও পারিবারিক সম্মিলন আয়োজনে প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন, জমিদার ছৈয়দ আহমদের নাতি হাটহাজারী চিকনদন্ডী কাটাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নাছিমা আকতার লিপি। এ আয়োজনে সমন্বয়ক হিসেবে আরও ছিলেন, জমিদার ছৈয়দ আহমদের তৃতীয় প্রজন্ম কক্সবাজার কমার্স কলেজের প্রধান সহকারী ছৈয়দ শাহেদুজ্জামান, রামু প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি খালেদ শহীদ, সাবিনা আকতার, জাহানারা বেগম জানু, সংগীতশিল্পী মিজানুর রহমান চৌধুরী, সুপার সাইন ক্যাবল কক্সবাজার শাখার সহ-ব্যবস্থাপক তারেক আজিজ, আল শিফা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতান মেহেদী হাছান, জমিদার ছৈয়দ আহমদ চতুর্থ প্রজন্ম কোরাল লাউঞ্জ রেস্টুরেন্টের ডিরেক্টর মো. ইসতিয়াব হক ইসতি ও তানজিদুস সোবাহান রিয়াদ।
সাংবাদিক খালেদ শহীদ ও সংগীত শিল্পী মিজানুর রহমান চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত জমিদার ছৈয়দ আহমদ প্রজন্ম’র মিলনমেলা ও পারিবারিক সম্মিলনকে আনন্দ-আড্ডায় উৎসব মুখর করে তোলেন, জমিদার ছৈয়দ আহমদের পুত্রবধূ লায়লা বেগম, আমেনা জেসমিন বিউটি, অগ্রণী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক রশিদ আহমদ, রত্মাপালং ইউনিয়নের সাবেক সদস্য শাহানুর বেগম শানু, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রাজিয়া বেগম, শাহানাজ পারভিন মিনু, ফরিদা ইয়াসমিন রুবি, রাশেদা খানম রাশি, কমরুন নাহার কমু, খুরশিদা আক্তার বেবি, সাবিনা আকতার, কক্সবাজার বাজারঘাটা চৌধুরী এন্ড সন্সের মালিক আজিজুল হক চৌধুরী, হাছান আজিজ, মো. মাসুদুজ্জামান, চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী এড. মিশকাতুল ইসলাম, সৌদিপ্রবাসী ব্যবসায়ী মাওলানা নেজাম উদ্দিন প্রমুখ।
মিলনমেলার সমন্বয়ক নাছিমা আকতার লিপি বলেন, আমার দাদা জমিদার ছৈয়দ আহমদের মৃত্যুর ৪২ বছর পরে, চার প্রজন্মের পারিবারিক সদস্যদের নিয়ে মিলনমেলা উদযাপন করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি ।
মিলনমেলায় অভূতপূর্ব মিলনে যোগদিয়ে অনুষ্ঠানকে সফল ও সার্থক করেছেন যারা, তাদের সবাইকে পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা আবারও একত্রিত হবো আরও বড় পরিসরে। কাজ করবো রক্ত-আত্মার বন্ধনে সামাজিকতা ও মানবিকতায়। আমরা পরিবার ও পরিবারের বাইরে অসহায় ও অসুস্থতায় জমিদার ছৈয়দ আহমদ প্রজন্মরা পাশে দাঁড়াবো।
পারিবারিক মিলনমেলাকে আরো সমৃদ্ধ ও আনন্দময় করে তোলে জমিদার ছৈয়দ আহমদের ৩ থেকে ৮০ বছর বয়সের চার প্রজন্মের অংশ গ্রহণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। এতে ৩ থেকে ৫ বছর বিভাগে সাতওয়াত শহীদ ওয়াসী প্রথম, আরোবা দ্বিতীয় ও আহলাম তৃতীয় হয়েছে। ৬ থেকে ১০ বছর বিভাগে তাসনিয়া প্রথম, রিয়ান দ্বিতীয় ও ফারহান তৃতীয় হয়েছে। ১১ থেকে ২০ বছরে ছেলে বিভাগে জিসান প্রথম, নাজাত দ্বিতীয় ও রায়াত তৃতীয় এবং মেয়ে বিভাগে মারুয়া প্রথম, তাকওয়া দ্বিতীয় ও সাফরা তৃতীয় হয়েছে। ২১ থেকে ৪০ বছরে ছেলে বিভাগে রিয়াদ প্রথম, তানভীর দ্বিতীয়, ইমন তৃতীয় এবং মেয়ে বিভাগে নয়ন প্রথম, সাইমা দ্বিতীয় ও মুন্নী তৃতীয় হয়েছে। ৪০ উর্বধ থেকে ৮০ বছরে ছেলে বিভাগে রফিকুল ইসলাম রিপন প্রথম, মিজানুর রহমান চৌধুরী দ্বিতীয় ও মিশকাতুল ইসলাম তৃতীয় এবং মেয়ে বিভাগে নাছিমা আকতার লিপি প্রথম, দ্বিতীয় শাহানুর বেগম শানু ও নুর নাহার তৃতীয় হয়েছেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।