সিবিএল নিউজ : কক্সবাজারের অন্যতম সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রামু সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি ও সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অধ্যক্ষের নিকট ২১ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে তারা বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা ও একটি উন্নত শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে এ দাবি উত্থাপন করেছেন।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মানোন্নয়ন, পর্যাপ্ত পাঠদান ব্যবস্থা, একাডেমিক পরিবেশের উন্নয়ন, শিক্ষকদের নিয়মিত উপস্থিতি, গবেষণার সুযোগ, গ্রন্থাগার সমৃদ্ধকরণ, পরীক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, ক্যান্টিন ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যবস্থা, নিরাপত্তা জোরদারসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।
অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন এবং কলেজ প্রশাসন যথাসাধ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানান।
শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগে কলেজের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
যে ২১ (একুশ) দফা দাবি উত্থাপন করা হলো :
১। কলেজ ক্যাম্পাসে সকল ধরনের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে।
২। ২০০৯ খ্রিঃ থেকে ২০২৪ খ্রিঃ পর্যন্ত এ সময়ে কলেজের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের খাতওয়ারী হিসাব (অনার্স বিভাগ সমূহের সেমিনার তহবিলসহ) ও উন্নয়নের নামে যে হরিলুট হয়েছে এর পূর্ণাঙ্গ বিবরণ, শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করতে হবে।
৩। সকল শিক্ষকদের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। সকল শিক্ষককে প্রতিদিন (সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্যতীত) পুরো ওয়ার্কিং আওয়ার (সকাল: ০৯:০০ ঘটিকা থেকে বিকাল ২:০০ ঘটিকা) পর্যন্ত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। অফিসিয়াল ছুটি ব্যতীত কলেজে অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সরকারি চাকুরি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। স্নাতক (অনার্স ও পাস) শ্রেণির শ্রেণি কার্যক্রম প্রতিদিন সাপ্তাহিক বন্ধ ব্যতীত চালুর ব্যবস্থা করতে হবে। কলেজ চলাকালীন কোন শিক্ষক কোচিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন না।
৪। কলেজ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বহিরাগত ও কিশোর গ্যাংয়ের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। কলেজের প্রধান ফটকের পাশে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা করে ক্যাম্পাসের ভিতরে যে কোন ধরনের যানবাহন, (মোটর সাইকেলসহ) প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।
৫। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে যে সব স্থাপনা রয়েছে তার নাম বাতিল করতে হবে। (শেখ হাসিনা একাডেমিক ভবন) এর নাম পরিবর্তন করে বিজয়’ ২৪ একাডেমিক ভবন নামকরণ করতে হবে।
৬। ক্লাস রুটিন সংস্কার, ক্লাস রুম সংকট নিরসন, ক্লাস রুমে পর্যাপ্ত লাইট, বৈদ্যুতিক পাখা (ফ্যান), সাউন্ড সিস্টেম, হোয়াইট বোর্ডসহ যাবতীয় সংস্কার করে অনতিবিলম্বে ক্লাসের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। জরুরী ভিত্তিতে ১ ও ২ নং কক্ষ সংস্কার করে ক্লাস উপযোগী করতে হবে।
৭। লাইব্রেরী কারিগরি ভবন থেকে স্থানান্তর করে বিজয়’ ২৪ একাডেমিক ভবনের ২য় তলায় ২০১ নাম্বার কক্ষে স্থাপন করতে হবে এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর অফিস ২০১ নাম্বার কক্ষ থেকে ২০২ নাম্বার কক্ষে স্থানান্থর করতে হবে।
৮। শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার মান উন্নয়নের সহায়ক বিষয় হিসেবে একাডেমিক ক্যালেন্ডার, পাঠ্য সিলেবাস, বিতর্ক ক্লাব, English Language Club, বিজ্ঞান ক্লাব, কম্পিউটার দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বাংলা সাহিত্য ও ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৯। অবিলম্বে মেডিকেল সেন্টার (প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য), ছাত্র-ছাত্রীদের কমন রুম এবং মহিলাদের নামাযের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০। কলেজের শিক্ষার্থীদের ওয়াশ রুম ব্যবহার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
১১। কলেজের শৃঙ্খলা ও মানোন্নয়নের স্বার্থে ৭৫% এর কম উপস্থিত শিক্ষার্থীদের নন-কলেজিয়েট ঘোষণা করতে হবে। প্রতি ৭৫ জন শিক্ষার্থীদের জন্য ০১ (এক) জন করে কাউন্সিলর প্রদান করে শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিংয়ের আওতায় আনতে হবে এবং কলেজের সার্বিক শৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে।
১২। শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল সিস্টেম (ফিঙ্গার প্রিন্ট) এর আওতায় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সকল শিক্ষার্থীদের স্টুডেন্ট আইডি কার্ড, ইউনিফর্ম নিশ্চিত করতে হবে।
১৩। কারিগরি ভবনের উত্তর-পশ্চিম পার্শ্বের পুকুরের পাড় দিয়ে অবৈধ যাতায়াত বন্ধ করতে হবে এবং সম্মুখ গেইটে গেইট ম্যানের জন্য একটি বক্স স্থাপন করতে হবে। কলেজের যাবতীয় সীমানা প্রাচীর স্থাপনা করতে হবে।
১৪। অনার্স এর সেমিনার সমৃদ্ধ করতে হবে এবং পড়ার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অনার্সের ড্রেস কোড পরিবর্তন করতে হবে।
১৫। কলেজের আইসিটি ল্যাবসহ যাবতীয় সকল বিভাগীয় ল্যাব সচল করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৬। কলেজের সার্বিক অগ্রগতি পর্যালোচনা করার জন্য প্রতি মাসের শেষ সপ্তাহে একটি মিটিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। সকল মিটিং এ শিক্ষার্থী প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
১৭। অফিসিয়াল কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। রসিদ বিহীন সকল লেনদেন বন্ধ করতে হবে। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ নির্ধারণ করতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের বিরবণ, রসিদভূক্ত ফি., মোবাইল নাম্বার সংযুক্ত অন্তত ২টি বিল বোর্ড স্থাপন করতে হবে।
১৮। কর্মচারীদের শুদ্ধাচার ট্রেনিং প্রদান করতে হবে। যোগাযোগের জন্য অফিসিয়াল অন্তত ২টি হটলাইন নাম্বার সংযুক্ত করতে হবে। দৃশ্যমান জায়গায় অভিযোগ বাক্স স্থাপন করতে হবে।
১৯। কলেজের সকল পরীক্ষার ফলাফল নিরীক্ষণ কমিটি গঠন করতে হবে।
২০। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য জরুরী ভিত্তিতে অন্তত ২ টি বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
২১। দূরের শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তত একটি হোস্টেলের ব্যবস্থা করতে হবে।
আগামী ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে ২১ (একুশ) দফা দাবি মেনে নিয়ে পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করলে রামু সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন করতে বাধ্য হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।