
সিবিএল: বিশ্বব্যাপী পর্যটনের বিকাশ ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের সেবা নিশ্চিতে “মানি একচেঞ্জ” বা বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের সুবিধা একটি অত্যাবশ্যকীয় কাঠামো। মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা কিংবা আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের পর্যটন নগরীগুলোতে রাস্তায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত মানি চেঞ্জার, যা ভ্রমণকারীদের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়।
দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সম্ভাবনাময় পর্যটন গন্তব্য কক্সবাজারে সেই সুবিধাটি এখনো অনেকাংশেই অনুপস্থিত। বর্তমানে এখানে মাত্র দুইটি ব্যাংক শাখা ও গুটিকয়েক অভিজাত হোটেলে বিদেশি মুদ্রা বিনিময়ের সীমিত সুবিধা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান মূলত তাদের নিজস্ব আবাসিক বিদেশি অতিথিদের জন্যই এই সুবিধা প্রদান করে থাকেন। সাধারণ পর্যটক বা পথিক বিদেশিদের জন্য এর কোনো সেবা কার্যত নেই বললেই চলে।
এই সীমাবদ্ধতার কারণে কক্সবাজারে আগত বিদেশি পর্যটকদের পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়। অনেকেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ রূপান্তর করতে না পারলে কক্সবাজারে এসে দিশেহারা হয়ে পড়েন। পর্যটনের অন্যতম মৌলিক অনুষঙ্গ যদি হয় অর্থনৈতিক লেনদেনের সুবিধা, তাহলে সেই জায়গাটিতেই যদি ভ্রমণকারী অপারগ হন, তা দেশের পর্যটন ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বৈদেশিক পর্যটন একটি সম্ভাবনাময় খাত। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো কক্সবাজারকেও আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরীতে রূপান্তর করার স্বপ্ন আমরা দেখছি। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে যদি মৌলিক পরিকাঠামোগত সুবিধাগুলোই অনুপস্থিত থাকে, তবে বৈশ্বিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করা দুরূহ হয়ে উঠবে।
আমাদের প্রতিবেশী ভারত একটি চমৎকার উদাহরণ। সেখানে সরকারি অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সিগুলোতেও ফরেন কারেন্সি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্স দেওয়া হয়। শুধু মাত্র ব্যাংক বা অভিজাত হোটেল নয়, ছোট ছোট পর্যটন তথ্য কেন্দ্র, ট্রাভেল শপ, এমনকি নির্ধারিত কিওস্কেও পর্যটকেরা অনায়াসে মুদ্রা বিনিময় করতে পারেন। এতে যেমন পর্যটকরা সুবিধা পান, তেমনি স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তারাও একটি নতুন ব্যবসায়িক সম্ভাবনার মুখোমুখি হন।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও ট্যুরিজম বোর্ডের উচিত কক্সবাজারে “ট্যুরিজম ফ্রেন্ডলি ফরেন এক্সচেঞ্জ নীতিমালা” চালু করা, যার আওতায় নির্ভরযোগ্য ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর কিংবা নির্ধারিত স্থাপনায় সহজ শর্তে লাইসেন্স প্রদান করা হবে। একই সঙ্গে মানি চেঞ্জিং কার্যক্রমে প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা, মানিলন্ডারিং নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
পরিশেষে, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা চালু হলে কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটকদের অভিজ্ঞতা যেমন ইতিবাচক হবে, তেমনি তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি লাভজনক ও নিরাপদ ব্যবসায়িক ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। আমাদের উচিত কক্সবাজারকে শুধু সৌন্দর্যের নয়, সেবার দিক থেকেও আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা করা।
প্রস্তাবনায়:
ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে সহজ শর্তে মানি চেঞ্জিং লাইসেন্স
নির্দিষ্ট জোনে পর্যটক সহায়ক এক্সচেঞ্জ বুথ
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ নির্দেশনা সহজ ও প্রযুক্তিনির্ভর করা
লেখক: মোঃ মিজানুর রহমান মিল্কি
সিইও, ট্রাভেল মার্ক
আহবায়ক- ট্যুর অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক)
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।